বর্তমান সময়ে আমরা যত সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি ইন্টারনেট এর ব্যবহার ততই দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারনে এখন কার যে কোন ব্যবসা অনলাইন ভিত্তিক ভাবে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ই-কর্মাস বা ই-বাণিজ্য ব্যাপক ভাবে বেড়েই চলেছে। আর এর মাধ্যমে আমাদের ব্যবসার পরিধি আরও ব্যাপক আকারে প্রসার হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম ই-কমার্স জায়েন্ট কোম্পানি অ্যামাজন ও আলি এক্সপ্রেস ই-কমার্স কোম্পানি হিসাবে তাদের আধিপত্ত বিশ্বব্যাপি বিস্তার করেই চলেছে। তাদের ব্যবসার টেকনিক কে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে আরও অনেক ই-কমার্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। যা আমাদের জীবন যাত্রাকে আরও সহজ ও গতিশীল করে তুলছে। তার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশেও অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
আপনি যদি নতুন এন্টারপ্রেনার হিসাবে নিজের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা বিজনেস শুরু করতে চান, তাহলে আপনার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রথমে প্রয়োজন হবে একটি ওয়েব সাইট তৈরি করা। আর একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য প্রয়োজন হবে ভালো মানের ডোমেইন ও হোস্টিং। কিন্তু আপনি যদি একদম নতুন হন এই ব্যাপারে, যদি আপনার কোন জ্ঞান ই না থাকে, তাহলে আপনার জন্য সঠিক ডোমেইন ও হোস্টিং প্রভাইডার খুজে বের করাটা অনেক কঠিন হবে। আর আপনার এই সমস্যার সমাধান করার জন্যই আজকের আলোচনায় আমরা “ই-কমার্স কি? এবং কিভাবে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য সেরা ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনবেন ?” এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে আপনি সঠিক ভাবে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে বিজনেস শুরু করতে পারেন……
সাধারণ অর্থে ই-কমার্স (E-commerce) এর ফুল ফর্ম হলো ইলেক্ট্রনিক কমার্স (Electronic Commerce)। ইন্টারনেট বা অনলাইনে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করে পন্য বা সেবা ক্রয় বিক্রয় করাই হচ্ছে ই-কমার্স। ই-কমার্স সাধারণত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর মাধ্যমে বাণিজ্য কাজ পরিচালনা করে। যেমন- অনলাইন শপিং, অনলাইনে নিলাম, অনলাইন সেবা, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট, ইত্যাদি পদ্ধতি হলো ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য। আর সহজ ভাষাই বলতে গেলে ই-কমার্স হচ্ছে অনলাইনে পন্য কেনাবেচার মাধ্যম।
ই-কমার্স ওয়েব সাইটের জন্য আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে ওয়েবসাইটের জন্য সঠিক ডোমেইন নেম সিলেক্ট করা। ওয়েবসাইটের এমন একটি নেম সিলেক্ট করতে হবে যার মাধ্যমে আপনার ব্যবসার ব্যান্ড ভ্যালু বৃদ্বি পায় বা প্রকাশ পায়। আর আপনার ডোমেইন নেম যেন অনেক বেশি বড় না হয় এবং নাম এর মধ্যে কোন সিম্বল বা হাইপেন ব্যবহার করে ডোমেইন নেওয়া যাবেনা। ডোমেইন নেম এর মাধ্যমে যেন আপনার ব্যবসার প্রতিষ্ঠান এর নাম ব্যবহার হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
১। আপনার ডোমেইন নেমটি অবশ্যই ব্যবসা বা আপনি যে ক্যাটাগরির প্রোডাক্ট সেল করবেন নামটাও যেন সেই রকম হয় এতে আপনার ব্যবসার পরিচিতি বাড়বে।
২। ডোমেইন নেমটি ছোট ও সহজে মনে রাখা যাবে এমন নেম সিলেক্ট করবেন। ডোমেইন নেম এ কোন সিম্বল বা হাইপেন ব্যবহার করবেন না।
৩। ডোমেইন নেমটি অবশ্যই .com ডোমেইন নিবেন । কারণ .com ডোমেইন হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডোমেইন। যা আপনার কাস্টোমার কে আরও বিশ্বস্ত করবে আপনার ব্যবসার জন্য। কিন্তু যদি .com ডোমেইন বা আপনার পছন্দের নাম না পান তাহলে অবশ্যই যাচায় করে নাম এর সাথে মিল রেখে অন্য একটি বেছে নিবেন, যা আপনার ব্যবসার সাথে যায়।
৪। আপনার নিধারিত ডোমেইন টি অবশ্যই কোন বিশ্বস্ত কোম্পানি থেকে নিবেন। যেন আপনার ডোমেইন এর ফুল কন্ট্রোল পান । এক্ষেতে আপনি Cyber Developer BD থেকে আপনার ডোমেইনটি নিতে পারবেন এখানে ডোমেইন এর ফুল কন্ট্রোল প্যানেল সাথে ২৪/৭ কাস্টোমার সার্ভিস পাবেন।
৫। আপনার ডোমেইন এর ফুল কন্ট্রোল যদি না পান তাহলে এমন কোন কোম্পানি থেকে ডোমেইন নিবেন না।
একটি ই-কমার্স সাইটের জন্য ডোমেইন সিলেক্ট করার পর । ওয়েবসাইটের জন্য দ্বিতীয় যে জিনিস প্রয়োজন হয় সেইটা হচ্ছে সঠিক হোস্টিং র্নিবাচন করা। হোস্টিং হচ্ছে আপনার সাইটের যে সকল ডাটা, ইমেজ, ফাইল, ও দরকারি যাবতীয় জিনিস যার মাধ্যমে আপনার সাইট আপনার ব্যবহারকারির নিকট ভিজিবল হবে। আর আপনার সাইটের দরকারি যাবতীয় ফাইল, ডাটা সার্বক্ষণিক চালু রাখার জন্য একটি জায়গা বা স্পেস এর প্রয়োজন হয় আর এই জায়গা হোস্টিং কোম্পানি থেকে ভাড়া নিতে হয় একেই ওয়েবসাইটের হোস্টিং বলে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ি হোস্টিং আপনি বিদেশী বা দেশের সেরা হোস্টিং কোম্পানি থেকে নিতে পারবেন।
হোস্টিং বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন: ক্লাউড হোস্টিং, শেয়ার্ড হোস্টিং, ভিপিএস (ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট সার্ভার) হোস্টিং, রিসেলার হোস্টিং, ডেডিকেটেড হোস্টিং ইত্যাদি। এর মধ্যে থেকে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য কি রকম হোস্টিং সার্ভিস প্রয়োজন সেই অনুযায়ী হোস্টিং প্যাকেজ নিতে হবে। এখন আপনার সাইটের জন্য কোন হোস্টিং টা নিবেন কি ভাবে বুঝবেন, নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সাধারণত আমরা যখন কোন ওয়েবসাইট হোস্ট করি, তা একটি সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু ক্লাউড হোস্টিং ভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাজ করে, এ ক্ষেত্রে অনেক গুলো সার্ভারের মাধ্যমে আপনার সাইট ইউজারের কাছে পৌছাতে পারে। অর্থাৎ একটি সার্ভারের মধ্যেই আপনার সাইট সীমাবদ্ধ না থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন সার্ভার এর সমন্বয়ে তৈরি বলয় বা ক্লাউড এর মাধ্যমে ইউজারের কাছে পৌছাতে পারে। এমনকি এই বলয় অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন দেশে সংরক্ষিত সার্ভার এর সমন্বয়ে তৈরি হয়ে থাকে। যার কারনে আপনার হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আপনার ভিজিটর র্সাচ দিলে আপনার ভিজিটর এর কাছের হোস্টিং সার্ভার থেকে ডাটা লোড হবে, এতে করে আপনার সাইটের ব্রাউজিং স্পিড সাধারণ হোস্টিং এর চাইতে ৩০%-৪০% গুন বেশি হবে। এই সব কারনে ই-কমার্স সাইটের জন্য ক্লাউড হোস্টিং আপনার জন্য প্রথম চয়েজ হওয়া দরকার। এতে করে আপনার ভিজিটর বেশি হবে এবং আপনার ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার ঘটবে। ক্লাউড হোস্টিং এর অন্যতম সুবিধা হচ্ছে এতে সিকিউরিটি অনেক বেশি থাকে যা একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য অধিক জরুরি। অপর পক্ষে ক্লাউড হোস্টিং একটু ব্যয়বহুলও বটে। তবে আপনার বাজেট যদি সমস্যা না হয় তা হলে ক্লাউড হোস্টিং এ বেছে নিবেন।
ক্লাউড হোস্টিং এর পর ই-কমার্স সাইটের জন্য আপনার দ্বিতীয় পছন্দ হওয়া উচিত ডেডিকেটেড হোস্টিং। ডেডিকেটেড সার্ভার এ একটি সার্ভার এর সকল রিসোর্স একজন ব্যবহারকারিকেই দেওয়া হয়। এখানে কোনো শেয়ার্ড রিসোর্স এর ব্যবস্থা নেই। ডেডিকেটেড সার্ভারে শুধুমাত্র একজন ব্যবহারকারি থাকে অর্থাৎ একটি সার্ভার এর প্রসেসর, র্যাম, স্টোরেজ ও ব্যান্ডউইথ – সবকিছু সেই ব্যবহারকারির জন্য বরাদ্দ করা থাকে। ডেডিকেটেড হোস্টিং এ ডেডিকেটেড সার্ভার এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট হোস্টিং করা হয়। ডেডিকেটেড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে সার্ভারের জায়গা, ব্যান্ডউইথসহ অন্যান্য সব রিসোর্স শুধুমাত্র একাই ব্যবহার করা যায়। ডেডিকেটেড সার্ভার একটি ই- কমার্স সাইটের জন্য অনেক ভালো পারফোমেন্স দিয়ে থাকে। ডেডিকেটেড হোস্টিং এর প্রাইস একটু বেশি । আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর বেশি হলে তখন ডেডিকেটেড হোস্টিং নিতে পারেন।
ভিপিএস এর ফুল ফর্ম হলো ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট সার্ভার (Virtual Private Server)। একটি ডেডিকেটেড সার্ভারকে ভার্চুয়ালাইজেশন টেকনোলজির (Virtualization Technology) মাধ্যমে একাধিক ভাগে ভাগ করে ছোট ছোট সার্ভার তৈরি করা হয়, আর এই সার্ভার কেই VPS বা ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট সার্ভার বলে। ই-কমার্স সাইটের জন্য এটি ব্যবহার করতে পারবেন। ভিপিএস হোস্টিং আর ডেডিকেটেড হোস্টিং প্রায় এক।
শেয়ার্ড হোস্টিং মানেই হচ্ছে এক পিসিতে একটা হার্ড ডিস্ক থাকবে সেই হার্ড ডিস্ক এর সব স্পেস অনেক গুলো ইউজারদের মধ্যে শেয়ার করা হয়। শেয়ার্ড হোস্টিং এ অধিক সংখ্যক ভিজিটর সাইটে এলেই সার্ভার ডাউন হয়ে যাওয়ার চান্স আছে আর শেয়ার্ড হোস্টিং এর অন্যতম সমস্যা হচ্ছে সিকিউরিটি এই ধরনের হোস্টিং সাধারণত ই-কমার্স সাইটের জন্য ব্যবহার করা হয় না বললেই চলে। এ ধরনের হোস্টিং ই-কমার্স সাইটের জন্য অনুপযোগী। তবে শেয়ার্ড হোস্টিং এর প্রাইস অনেক কম থাকে। এই ধরনের হোস্টিং পারসোনাল ব্লগ বা পোর্টফওলিয় ওয়েবসাইটের জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়।
এইসবকিছু অবশ্যয় যাচাই করে আপনার ই-কমার্স সাইটের জন্য ডোমেইন ও হোস্টিং কিনবেন। অল্প মূল্যে ডোমেইন ও সস্তা হোস্টিং কিনে আপনার মূল্যবান ওয়েবসাইটকে ঝুকিতে রাখবেন না। অল্প টাকা বা অল্পদামে কখনও ভালোমানের সার্ভিস পাওয়া যায় না এইটা অবশ্যয় খেয়াল রেখে আপনার কোম্পানির জন্য ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনবেন।
ই-কমার্স ব্যবসা বর্তমান পেক্ষাপটে অনেক দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একজন নতুন এন্টারপ্রেনার বা উদ্যোক্তা হিসাবে নিজের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা বিজনেস শুরু করতে চান, তাহলে উপরের সমস্ত বিষয় গুলো সঠিক ভাবে বিচার বিশ্লেষন করে আপনার ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে আপনার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
কিভাবে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনতে হয় এই বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ন গাইডলাইন সহ জানতে ভিডিওটি দেখতে পারেন।