বিগত কয়েক বছর ধরে অনলাইন পাড়ায় web 3.0 নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এইটাই হচ্ছে ইন্টারনেট এর ফিউচার, পুরো নেট দুনিয়া হবে ডিসেন্ট্রালাইসড, সব ডাটা থাকবে ব্লক চেইনের মাধ্যমে, সবার প্রাইভেসী বজায় থাকবে, কোন তথ্য হ্যাক করা হবে না কোনভাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আজকে আমরা আলোচনা করব এই web 3.0 আসলে কি, কিভাবে কাজ করে এবং এইটা আসলেই কি ফিউচার নাকি মিথ।
web 3.0 কি জানার আগে আসলে আমাদের প্রথমেই আগে জানতে হবে web 2.0 এবং web 1.0 টা আসলে কি?
ইন্টারনেট আবিষ্কারের সাথে সাথে চলে আসে web 1.0, মূলত Web 1.0 তে ওয়েবসাইট আপনি শুধু ব্রাউজ করতে পারতেন, দেখতে পারতেন কিন্তু কোন ইন্টারেক্ট করার সুযোগ ছিল না। অনেকটা HTML এর স্ট্যাটিক সাইটের মত। মানে এখানে শুধু আপনি ডাটা রিড করতে পারবেন। আপনি কোন ডাটা এখানে ইনপুট করতে পারবেন না বা আপনার ইন্ড থেকে কোন ডাটা সার্ভারে যাবে না। সেইটা হতে পারে আপনি কোন একটা পোস্টে লাইক দিচ্ছেন, সার্ভারে ডাটা যাচ্ছে হ্যা আপনি ঐ পোস্টে লাইক দিয়েছেন, আপনি কমেন্ট করতে পারছেন, একাউন্ট ওপেন করতে পারতেছেন ইত্যাদি।
সো ২০০৪ সালের দিকে ইন্ট্রোডিউজ হয় web 2.0। এইটা আবিষ্কারের পরপরই ইন্টারনেট পাড়ায় মুটামুটি এক রেভুলেশন ঘটে যায়। চলে আসে বিভিন্ন সোসাল মিডিয়া, যেখানে আপনি পোস্ট দিতে পারবেন, লাইক দিতে পারবেন। চলে আসে ইকমার্স সাইট যেখানে আপনি অর্ডার করতে পারতেছেন, একাউন্ট করতে পারতেছেন। পুরো ইন্টারনেট দুনিয়াটাই চেঞ্জ হয়ে যায়। আমরা এখন চাইলেই আমাদের কন্টেন্ট, প্রোডাক্ট, ক্রিয়েশন অনলাইনে শেয়ার করতে পারতেছি, সেল করতে পারতেছি। দিনকে দিন বিভিন্ন আপডেট ও আপগ্রেশনের মাধ্যমে আজ ২০২২ সাল ইন্টারনেট দুনিয়া আজকের অবস্থায় পৌছাইছে।
কিন্তু সমস্যা দাড়াচ্ছে এই ইন্টারনেট দুনিয়ায় ডাটা সিকিউরিটি নিয়ে। যতদিন দিন যাচ্ছে অনলাইনে পন্যের কেনা বেচা বাড়তেছে। সেই সাথে বাড়তেছে ডাটা সিকিউরিটির রিক্স। ধিরে ধিরে প্রোডাক্ট হয়ে যাচ্ছি আমরা, মানে পিপল। অনলাইনে এখন কেনাবেচা চলছে আমাদেরকেই। এই অনলাইন দুনিয়াটা কন্ট্রোল করতেছে গুগল, ফেসবুক আমাজনের মতন কিছু জায়ান্ট কোম্পানী। আবার এই জায়ান্ট কোম্পানীগুলোই আমাদের ডাটা সেল করে কামাচ্ছে বিলিওন বিলিওন ডলার। আমি কি করতেছি, কোথায় যাচ্ছি, কি কথা বলতেছি সব কিছুই ট্রাক করা হচ্ছে। আমরা যখন কোন ওয়েবসাইটে ঢুকতেছি সেই অনুযায়ীই আমাদের সামনে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন শো করানো হচ্ছে। অনলাইনে একটা কন্সপারেসী থিউরী আছে, “My phone is always listening to me” মানে হচ্ছে আপনার ফোন সব সময় আপনাকে শুনতেছে এবং সার্ভারে ডাটা পাঠাচ্ছে। উপরের লাইনটা লিখে গুগলে সার্চ করলে আপনি এরকম অনেক কন্সপারেসী ও কন্ট্রোভার্সি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এমন কি আপনার সাথে কখনো হয়েছে, আপনি পাশাপাশি বসে আপনার বন্ধুর সাথে বসে আইফোনের কোন টপিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। পরে অনলাইনে এসে দেখতে পাচ্ছেন আপনাকে আইফোনের বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে বা আপনি কোন স্মার্ট ওয়াচ নিয়ে আলোচনা করেছেন অনলাইন দেখলেন আপনাকে স্মার্ট ওয়াচের অ্যাড দেখানে হচ্ছে। আপনার মোবাইল পকেটে নিয়ে, যেমন কোন গাড়ির মেলা, রিয়েল এস্টেড ফেয়ারে গিয়েছেন। আপনি তারপর কয়েকদিন ধরে শুধু এই রিলেটেড বিজ্ঞাপনই অনলাইনে দেখতেছেন। আমার সাথে এরকম হয়েছে। আমি এর আগে বগুড়াতে রিয়েল এস্টেড মেলায় গিয়েছিলাম। এর পর অনেক দিন ধরে ফেসবুকে আসলেই আমি বিভিন্ন রেডিমেট ডোর এর অ্যাড দেখতাম। অথচ এই ধরনের কোন পেজ আমি কখনো ভিজিটও করি নাই লাইকও দেই নাই।
তার মানে হচ্ছে এই অনলাইন দুনিয়াই আমরাই প্রোডাক্টে পরিনত হয়েছি। আমাদের ডাটা বিক্রি করেই বড় বড় জায়ান্ট কোম্পানীগুলো বিলিওনিয়ার হচ্ছে। সেই সাথে আমাদের মাইন্ড সেটাপ, আমাদের বিহাবিয়ার নিয়ন্ত্রনও করছে তারাই। আমাদের কি করা উচিৎ, কোন প্রোডাক্ট কেনা উচিৎ, কোনটা না কিনলে আমাদের মান সন্মান থাকবে না, কোন কাজ টা আমাদের করতেই হবে, কোন কালারের পোষাক আমাদের পরতে হবে ইন্ডাইরেক্টলী তারা এসব বলে বলে দিচ্ছে। আমরাও রোবোটের মতন সেই সব কাজই করে যাচ্ছি। তো এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই web 3.0 ধারনার জন্ম হয়।
web 3.0 হচ্ছে এমন এক ইন্টারনেট দুনিয়া যেখানে সব কিছুই হবে ডিসেন্ট্রালাইজড। যেখানে কারো কোন কন্ট্রোল থাকবে না। বড় বড় কোম্পানীগুলো এসে মাথা মারতে পারবে না। আপনার একটা ওয়েবসাইট বানাতে কোন হোস্টিং কিনতে হবে না। আপনি একটা ডোমেইন কিনলে সেইটার আজীবন মালিক আপনিই থাকবেন। আপনাকে বছর বছর রিনিউ করতে হবে না। এর উপরে কোন কোম্পানির নিয়ন্ত্রন থাকবে না। আবার আপনার ডোমেইন আপনি চাইলে আরেকজনের কাছে বিক্রিও করে দিতে পারেন। পুরো সিস্টেমটা চলবে একটা ব্লক চেইনের মাধ্যমে। আপনার অনলাইন এক্টিভিটি থাকবে একদম প্রাইভেট। আপনাকে কেউ ট্র্যাক করতে পারবে না। আপনার ডাটা কেউ কখনো হ্যাক করতে পারবে না। কখনো সাইট ডাউন হবে না। কিভাবে এইটা সম্ভব হবে? এইটা জানতে হলে আপনাকে আগে জানতে হবে কিভাবে এই সিস্টেমটা কাজ করে।
web 3.0 এর ডাটাগুলো থাকবে ব্লক চেইনের মাধ্যমে ইনক্রিপটেড অবস্থায়। মানে আমাদের কম্পিউটারগুলোই সার্ভার হিসেবে কাজ করবে এবং ডাটাগুলো অসংখ্য কম্পিউটারে ব্লক চেইনের মাধ্যমে থাকবে। এক সাথে অসংখ্য কম্পিউটার থেকে আপনার ডাটাগুলো অনলাইনে সিড করতে থাকবে। তারমানে আমার ওয়েবসাইট কখনোই ডাউন হবে না। বর্তমান ইন্টারনেট এর যুগে দেখা যায় অনেক বড় বড় জায়ান্ট কোম্পানীর ওয়েবসাইটও কিন্তু ডাউন হয়। যেহেতু আপনার ওয়েবসাইট লোড হবে বিশ্বের অসংখ্য ইন্টারনেট ইউজারের কম্পিউটার থেকে, সো আপনার ওয়েবসাইট ডাউন হবার কোন ভয় নাই। আপনার ওয়েবসাইট কখনো হ্যাক করা সম্ভব না। কারন আপনার ওয়েবসাইট কোন একক সার্ভারে নাই। কোন হ্যাকারকে যদি আপনার ওয়েবসাইটকে হ্যাক করতে হয় তাহলে তাকে এই সবগুলো কম্পিউটারকেই হ্যাক করতে হবে যা কিনা একরকম ইমপসিবল ব্যাপারই। আপনার ডাটা চাইলেই কেউ ডিলিট করে ফেলতে পারবে না।
এখন যেমন ফেসবুকে আপনি একটা পোস্ট দিলেন, ফেসবুকের পলেসীর সাথে গেলো না। আপনার পোস্ট ডিলিট করে দিলো। আপনি একটা সাইট বানালেন। ডাটাসেন্টারের পলেসীর সাথে গেলো না। আপনার সাথে সাসপেন্ড করে দেয়া হলো বা সাইট বন্ধ করে দেয়া হলো। কিন্তু web 3.0 তে এমন ঘটবে না। আপনার ডাটার কন্ট্রোল থাকবে এক মাত্র আপনার হাতে একটা টোকেন কী এর মাধ্যমে। আপনার ডাটা আপনি ছাড়া আর কেউ ডিলিটও করতে পারবে না। আর যেহেতু কোন সেন্ট্রালাইজেশন নাই তাই আপনি ছাড়া এইটা মুছে ফেলাও সম্ভব না।
গুগল, বিং এর মতন সার্চ ইঞ্জিনগুলো মাছি মারবে। কারন তাদের কোন অস্তিত্বই থাকবে না। এসইও বলে কিছুই থাকবে না। তাহলে কথা হচ্ছে আপনি অনলাইনে ডাটা খুজে পাবেন কিভাবে? সম্পুর্ন ভিন্ন ধরনের সার্চ ইঞ্জিন চলে আসবে। এসইও না থাকলে তাহলে পেজ র্যাংক করবে কিভাবে? অবশ্যই ভোটিং এর মাধ্যমে। যার পেজ যত বেশি মানুষ পছন্দ করবে তার সাইট তত আগে থাকবে। web 3.0 এর সাইট ভিজিট করতে লাগবে আপনার স্পেশাল ব্রাওজার। অলরেডি এরকম ব্রাওজার চলে এসেছে। ব্রেভ ব্রাওজার এরকমই একটা ব্রাওজার। তাছাড়া আমাদের চিরচেনা ওপেরা ব্রাওজারও তাদের web 3.0 ব্রাওজার ভার্সন নিয়ে চলে এসেছে।
আমরা যখন অনলাইনে কোন কিছু কেনাকাটা করতে যাই তখন আমাদের সব চেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় পেমেন্ট গেটওয়ে। অনেক পেমেন্ট গেটওয়েই আমাদের দেশে সাপোর্টেড না। যেমন পেপাল এখনো আমাদের দেশে তাদের সার্ভিস শুরু করে নাই। কিন্তু web 3.0 তে এরকম কোন বাধা থাকবে না। web 3.0 তে আমরা কেনা কাটা করতে পারব ক্রিপটো কারেন্সীর মাধ্যমে। যেটা কিনা আরেকটা ব্লক চেইন সিস্টেম। এখানেও থাকবে সেই প্রাইভেসীর ব্যাপারটাই। আপনি কোথায় থেকে কাকে পেমেন্ট করলেন কোন ট্র্যাকিং থাকবে না। আমাদের প্রাইভেসী পরিপূর্নভাবে বজায় থাকবে।
web 3.0 এর ওয়েবসাইট ভিজিট করতেও লাগবে স্পেশাল ডোমেইন নেম, যাকে ENS ডোমেইন বলা হচ্ছে। মানে ইথেরিয়াম নেটওয়ার্ক সিস্টেম। এরকম একটি ডোমেইন এক্সটেনশন হচ্ছে .nft যার ফুল ফর্ম non-fungible token। এখানে fungible কথাটার অর্থ দাড়াচ্ছে বিনিময় যোগ্য আর non-fungible হলো বিনিময় যোগ্য না। আরো ভালভাবে যদি বুঝিয়ে বলি, আমরা যখন অনলাইনে আমাদের কোন কন্টেন্ট আপলোড দেই (সেইটা হতে পারে কোন লেখা, ভিডিও বা ছবি) সেইটা আরেকজন চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিতে পারে। non-fungible সিস্টেমে আপনার জিনিস কেউ চুরি করতে পারবে না। এইটার মালিকানা সহজেই ভেরিফাই করা যাবে। যার কাছে এই টোকেন থাকবে সেই ই মালিক। সো কেউ আরেকজনের তৈরী জিনিস নিয়ে নিজের বলে দাবি করতে পারবে না। সো আপনি একটা ছবি, আইকন তৈরী করেছেন, এইটা বিক্রি করার অধিকার শুধু আপনার হাতেই থাকবে। আপনি nft তে কনভার্ট করে এটি বিক্রি করতে পারবেন। আবার এই ডোমেইন যখন আপনি কিনবেন এর মালিকানা আপনার আজীবন থাকবে। কারন এই ডোমেইন এর কোন সেন্ট্রালাইসড কন্ট্রোল থাকবে না। ডোমেইনটা হবে একটা ইনক্রিপ্টেড কোড বিশেষ যা আপনার কম্পিউটারেই থাকবে, আরেকজনের কম্পিউটারে থাকবে। পুরো ডোমেইন সিস্টেমটাই হবে ব্লক চেইনের মাধ্যমে। আপনার ডাটা আরেকজনের পিসিতে লিংক আছে। সে যদি কোনভাবে এইটা এডিট করেও থাকে তবে আরেকজনের পিসি থেকে সেইটা ভেরিফাই হবে এবং ভেরিফাই না হলে ইনভ্যালিড হয়ে যাবে।
web 3.0 এর আরেকটি বড় সুবিধা হলো এর আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। পুরো web 3.0 নিয়ন্ত্রন করবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম বা এআই। আর এটার ডেভলোপার হবে সবাই। মানে পুরো সিস্টেম হবে ওপেন সোর্স। দুনিয়ার লাখ লাখ স্বেচ্ছাসেবী ডেভলোপারগন দিনকে দিন এইটা ডেভলপ করে যাবে।
ইউটিউব, ফেসবুকের মতন অনেক সাইট চলে আসবে যার কোন একক মালিক থাকবে না। এখন কি হচ্ছে? আমরা ইউটিউবের জন্য ভিডিও বানাচ্ছি ইউটিউব চাইলেই সেইটা তাদের সার্ভারে রাখতেছে আবার না চাইলেই সেইটা রিমুভ করে দিচ্ছে। আবার ইউটিউবে যে অ্যাড শো করতেছে তার সামান্য পার্সেন্টই পাচ্ছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরগন। কিন্তু ডিসেস্ট্রালাইজড সিস্টেমে আপনার কন্টেন্ট এর মালিক আপনি নিজেই, অন্য কেউ নয়। যার কারনে আপনার কন্টেন্ট থেকে যে ইনকাম আসবে তার পুরোটাই আপনি পাবেন। কাউকে ভাগ দিতে হবে না বা কেউ কন্ট্রোল করতে পারবে না।
আবার যদি ইন্টারনেট স্পীড এর কথা ধরেন। এটি হবে অনেক ফাস্ট। কারন web 3.0 তে সিস্টেম কাজই করবে পিয়ার টু পিয়ার। আপনার পাশের বাড়ির ইন্টারনেট ইউজারও একটা সার্ভারের মালিক। আপনার ওয়েব সাইট লোড হবে আপনার আশেপাশে থাকে এরকম অসংখ্য কম্পিউটার থেকে। সো লোডিং স্পীড বা নেট স্পীড হবে অকল্পনীয় ফাস্ট। হয়তো নেট লাইনের জন্য আলাদা কোন বীলও দিতে হবে না। নেট হবে ফ্রী বা খুবই স্বল্পমুল্যে।
কথাগুলো শুনতে অনেকটা কল্পকাহিনীর মতন শুনায়, মনে হয় স্বপ্ন। ভালোই তো লাগে। সমস্যাটা কি তাহলে? সমস্যা আছেই। অনেক বড় ধরনের সমস্যাই আছে এখানে।
web 3.0 এর সব চেয়ে বড় সমস্যাই হচ্ছে এর ডিসেন্ট্রালাইসড সিস্টেম। যেহেতু এইটার কোন নিয়ন্ত্রন থাকবে না তাই যে কেউ ই চাইলে যেকোন কিছু অনলাইনে করতে পারেন। প্রকাশ্যে অনলাইনে অস্ত্র কেনাবেচা চলতে পারে, কারো গোপন দৃশ্যধারন করে পর্নগ্রাফি বানিয়ে নেটে ছেড়ে দিতে পারে, জংগীবাদের অর্থসংস্থান হতে পারে, প্রকাশ্যে জংগীবাদের প্রচার হতে পারে, যেকাউকে যে কেউ হুমকী দিতে পারে। কিন্তু এসবের কোন ট্র্যাকিং থাকবে না। কে করলো কিভাবে করলো কেউ জানবে না। আপনার সাথে কোন অকারেন্স ঘটে গেলে আপনি কাউকে ধরতে পারবেন না। আপনি কারো কাছে বিচার চাইতে পারবেন না।
এমন একটা সিস্টেম কোন দেশের গভার্নমেন্ট কি আসলে চালু হতে দেবে? ধরেন web 3.0 আসলো এবং একে একে সকল দেশ এটাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করলো। আপনি web 3.0 তে প্রবেশ করা মাত্রই আপনার গেটে পুলিশ চলে আসলো। web 3.0 তে কি করতেছেন না করতেছেন এইটার কোন ট্র্যাকিং হবে না সত্য কিন্তু নেট কানেকশন ইউজ করে web 3.0 তে প্রবেশ করেছেন সেইটাতো সরকার জানতে পারবে। কোন গভমেন্ট কখনোই চাইবে না পুরো সিস্টেমটা তার নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যাক।
আচ্ছা এই পয়েন্টটা যদি বাদও দেই তাহলেও ডিসেন্ট্রালাইসড সিটেমে সব চেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্থ হবে বড় বড় টেক জায়ান্ট কোম্পানীগুলো। web 2.0 এর জন্মই হয়েছে ব্যবসার জন্য। ইউজারদের কথা চিন্তা করে নয়। এর উন্নয়নে বড় বড় টেক জায়ান্ট কম্পানী টাকা ঢেলেছে। বহুত আপগ্রেশনের মাধ্যমে আজকের এই অবস্থানে এসেছে। যেখানে কাজ করেছে বিশ্বের সেরা সেরা সব ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু web 3.0 তে কি এই টেক জায়ান্ট কম্পানীগুলো টাকা ঢালবে? অবশ্যই না। যেখানে তাদের কোন কন্ট্রোলই থাকবে না সেখানে তাদের টাকা ঢালার প্রশ্নই আসে না। সো এখানে ডেভলপমেন্টটাও থমকে থাকবে। যেখানে বেশি সুযোগ সুবিধা ট্রাফিকও ফ্লো করবে সেই দিকেই। web 3.0 হয়ে থাকবে গুটিকয়েক স্বেচ্ছাসেবীগ্রুপের আড্ডাখানা। টেরোরিস্ট গ্রুপের মিলনস্থল ঠিক ডার্ক ওয়েবের মতই।
এখানে আরো একটা সমস্যা হলো এই ধরনের প্রযুক্তি চলতে আমাদের বর্তমান কম্পিউটারগুলোও কিন্তু উপযোগী নয়। যেহেতু বিশাল ডাটা ট্রান্সফার হচ্ছে (আপলোড/ডাউনলোড), সো আপনার পিসিও অনেক হাই কনফিগ হতে হবে। যদিও আপাতত ধরে নিচ্ছি ভবিষ্যতে পিসিগুলো সব আপগ্রেড হয়ে যাবে web 3.0 এর উপযোগী হয়ে। কিন্তু খরচ?
আপনি যখন একটা ওয়েবসাইট বানাবেন তখন এর র্যাংকিং সিস্টেমটা কিরকম হবে? যেহেতু এর কোন এসইও সিস্টেম নাই। অনলী ভোটিং সিস্টেম। এরকম অনেক সাইট বা সার্ভার চলে আসবে যারা এই ভোট বিক্রি করে। আপনি ওদের সার্ভারে টাকা দিয়ে সাইট অ্যাড করে দেবেন আর আপনার সাইটে ভোট পরতে থাকবে। যতবেশি টাকা ঢালবেন ততবেশি ভোট। যারা ভোট দেবে তারাও ঐ সাইটগুলোর মেম্বার থাকবে এবং টাকা পাবে। ভোট আদান প্রদান হবে। ঠিক যেমন ফেসবুকের লাইক সার্ভারের মতন। পুরো র্যাংকিং সিস্টেমটাই চলবে একটা আনইথিক্যাল সিস্টেমে।
এখন আরেকটা প্রশ্ন, যদি আমাদের ডাটাগুলো বা সাইটগুলো পুরাতন হয়ে যায় তাহলে কি হবে? অন্য সার্ভারগুলো থেকে কি ডাটা পাবে? এখানে টরেন্ট সিস্টেমের কথা বলা যেতে পারে যেহেতু টরেন্টও কিন্তু অনেকটা এই রকম পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেমেই কাজ করে। অনেক পুরাতন মুভি, ভিডিও কিন্তু টরেন্টে থাকে, কিন্তু ডাউনলোড করা যায় না বা লোড হয় না সিড বা পিয়ার না থাকায়। এখানেও কি এরকম কিছুই হবে? এইটা নিয়ন্ত্রন হবে কিভাবে?
যদি সিকিউরিটির কথা বলা হয় তখন মাথায় একটা প্রশ্ন জাগে।, এটি আসলেই কি ডিসেন্ট্রালাইসড? এটি আসলে প্রথম শুরু করে অনলাইনে দিচ্ছে কে? তার হাতে কি কন্ট্রোল নাই? এই বিষয়ে টুইটারের সাবেক সিইও Jack Dorsey এর একটা টুইট এর স্ক্রিনশট আপনাদের দিতে চাই।
web 3.0 এর বিষয়ে Jack Dorsey এর মুল টুইটটি দেখতে পারবেন এখান এখানে। টুইটটি ৭,১৬২ বার রিটুইট হয়েছে, ৩,৩১৯ জন কোট করেছে এবং ৪৩,৭০০ জন লাইক করেছে।
টেসলা কার কোম্পানীর মালিক ইলোন মাস্ক এর একটা টিউট পাওয়া যায় যেখানে তিনি বলেছেন “উনি এটিকে বাসব বলে মানেন না। এটা বাস্তবের তুলনায় অনেকবেশি মিডিয়ার সৃষ্টি”
ইলন মাস্ক এর মুল টুইটটি পাবেন এখানে। এর একদিন পরেই আবার তিনি বলেন “Has anyone seen web3? I can’t find it.”
সো দেখাই যাচ্ছে web 3.0 বাস্তবিক অবস্থা কি। দুইটা একটা সাইট web 3.0 এর জন্য ডোমেইন বিক্রি করা মানেই web 3.0 বাস্তব রুপ নিয়ে ফেলছে ব্যাপারটা এমন নয়। যদি বাস্তব রুপের কথাই বলতে চান তাহলে আমাদে দেখাতে হবে বাস্তব রুপটা কোথায়? web 3.0 এর জন্য ডোমেইনও কিন্তু অলরেডি সেল হয়েছে অসংখ্য। অনেকেই হুজুকে পরে ধুমাধুম ডোমেইন কিনে ফেলতেছে। ভবিষ্যতে যদি ভাল কীওয়ার্ড দিয়ে ডোমেইন আর না পায়। আর মাঝখান থেকে ফায়দা লুটতেছে সেই ডোমেইন সেলার কোম্পানীগুলো।
বর্তমানে ক্রিপ্টো কারেন্সীও কিন্তু ধিরে ধিরে জনপ্রিয়টা হারাচ্ছে? কাল কিছনে দেখা? web 3.0 এর ভবিষ্যৎ আসলে কি হবে এইটা এখনো ঐভাবে বলা যাচ্ছে না। এখনো এটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো এটি শুধুই থিওরি মাত্র। ভবিষ্যৎ ই বলে দেবে এইটা আসলেও বাস্তাবায়িত হওয়া সম্ভব কিনা। তবে আমার কাছে এটি একটা মিথ বা কল্পকাহিনীই মনে হয়। যা বাস্তবে পরিনত হওয়া অনেক কঠিন।