ক্লাউড কম্পিউটিং বর্তমান প্রযুক্তিসমূহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত। ক্লাউড কম্পিউটিং বহুল অগ্রগতি প্রযুক্তি যা ডেটা সংরক্ষণ, ডেটা প্রস্তুতিকরণ, রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এবং অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একটি একক প্ল্যাটফর্মে অনেক প্রকারের সেবা প্রদানে ব্যবহারকারীদের সুযোগ প্রদান করে এবং তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন অপারেশনাল কাজের সুবিধা বাড়ায়। এই প্রযুক্তিতে, ডেটা এবং সফটওয়্যার ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্ভারে সংরক্ষণ এবং প্রস্তুতি করা হয় এবং ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে। ক্লাউড পরিষেবাগুলি অপারেটিং খরচ কমাতে, আপনার পরিকাঠামো আরও দক্ষতার সাথে চালাতে এবং ব্যবসার স্কেল পরিবর্তনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
সব ক্লাউড একই নয় এবং কোনো একক ধরনের ক্লাউড কম্পিউটিং সবার জন্য সঠিক নয়। আপনার প্রয়োজনের জন্য বিভিন্ন মডেল, প্রকার এবং পরিষেবাগুলি বিকশিত হয়েছে। প্রথমে, আপনাকে ক্লাউড কম্পিউটিং আর্কিটেকচার নির্ধারণ করতে হবে, যেটিতে আপনার ক্লাউড পরিষেবাগুলি প্রয়োগ করা হবে। ক্লাউড কম্পিউটিং প্রকার বিভিন্ন উপায়ে বিভক্ত হতে পারে, তবে মূলত তিনটি প্রধান প্রকার রয়েছে:
পাবলিক ক্লাউড: পাবলিক ক্লাউড হলো একটি ক্লাউড কম্পিউটিং মডেল যেখানে সকলের জন্য সার্ভিস প্রভাইড করা হয়। এই মডেলে সেবা প্রদানকারী পাবলিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে এবং ব্যবহারকারীরা ওয়েব ব্রাউজার বা অন্যান্য ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে সেবা ব্যবহার করতে পারেন। পাবলিক ক্লাউডে ব্যবহারকারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেবাগুলি ব্যবহার করতে পারেন এবং প্রয়োজনে তাদের ব্যবসায়িক প্রয়োজনীয় সমস্ত সরঞ্জাম এবং সেবা ব্যবহার করতে পারে। এই মডেলে, ব্যবহারকারীরা সার্ভারের মান, স্টোরেজ, নেটওয়ার্কিং সম্পর্কিত সকল সরঞ্জাম এবং সেবা ব্যবহার করতে পারে প্রয়োজনমতো।
পাবলিক ক্লাউডের উদাহরণ হলো; Amazon Web Services (AWS), Microsoft Azure, Google Cloud Platform (GCP), IBM Cloud ইত্যাদি। এই প্ল্যাটফর্মগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সার্ভিস প্রদান করে এবং ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী রিসোর্স প্রদান করে।
প্রাইভেট ক্লাউড: প্রাইভেট ক্লাউড হলো এমন একটি ক্লাউড কম্পিউটিং মডেল যেখানে একটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন তাদের সংগঠনের অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ক্লাউড সেবা প্রদান করে। এই মডেলে সেবা প্রদানকারী সার্ভার, নেটওয়ার্ক, স্টোরেজ এবং অন্যান্য কম্পিউটিং ব্যবহার করে সংগঠনের কম্পিউটিং নীতিমালা অনুযায়ী ।
প্রাইভেট ক্লাউড সাধারণত সংগঠনের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কে প্রতিষ্ঠান করা হয় এবং সংগঠনের নিজস্ব ডেটা সনাক্ত করতে এবং নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক। এই প্রযুক্তিতে সংগঠনের ব্যবসায়িক গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
প্রাইভেট ক্লাউড এর উদাহরণ হলো VMware vCloud, OpenStack এবং মাইক্রোসফট এজ্যুর স্ট্যাক প্রাইভেট ক্লাউড। এই প্রযুক্তিগুলি প্রয়োজনীয় সমস্ত সেবা এবং রিসোর্স প্রদান করে এবং ব্যবহারকারীদের সংগঠনের কাস্টমাইজড প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করে।
হাইব্রিড ক্লাউড: হাইব্রিড ক্লাউড হলো এমন একটি ক্লাউড কম্পিউটিং মডেল যেখানে সংগঠন তাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্ভার, স্টোরেজ, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য কম্পিউটিং সম্প্রসারণের সমন্বয়ে প্রাইভেট এবং পাবলিক ক্লাউড সেবা ব্যবহার করে। এই মডেলে, সংগঠন সংগঠনের বিভিন্ন অংশে বা বিভিন্ন ধরণের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের জন্য পাবলিক এবং প্রাইভেট ক্লাউড সমন্বয়ে ব্যবহার করা হয়।
হাইব্রিড ক্লাউডে সংগঠন কোনও কোনও গোপনীয় তথ্য বা নিজস্ব সেবা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রাইভেট ক্লাউডে রাখতে পারে, তবে উন্নত গতিতে একই সময়ে পাবলিক ক্লাউডে অতিরিক্ত স্কেলাবিলিটি এবং সহজেই অ্যাক্সেস করার জন্য প্রয়োজন সেবা প্রদান করে। এটি সংগঠনের দক্ষতা, নিরাপত্তা এবং ব্যবসায়িক প্রয়োজনের অনুযায়ী সেবা প্রদানের জন্য গঠিত করা হয়।
হাইব্রিড ক্লাউড এর উদাহরণ হলো অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস (AWS) এর AWS Outposts, মাইক্রোসফট এজ্যুর স্ট্যাক হাইব্রিড, গুগল ক্লাউড প্লাটফর্ম (GCP) এর Anthos এবং বিভিন্ন অন্যান্য প্রযুক্তি যা প্রাইভেট এবং পাবলিক ক্লাউড সেবা সমন্বয়ে ব্যবহার করা হয়।
প্রধানত ৩ ধরণের ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস পাওয়া যায়। এগুলো হলো;
IaaS
IaaS হলো “Infrastructure as a Service” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি একটি ক্লাউড কম্পিউটিং মডেল যেখানে সেবা প্রদানকারী উপকরণ এবং সেবা সরবরাহ করে, যা ব্যবহারকারীদের ব্যবসায়িক নিজস্ব ডেটা সেবার উপর নির্ভর করে।
IaaS প্রদানকারী সার্ভার, নেটওয়ার্কিং, স্টোরেজ এবং অন্যান্য ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার সংস্থান উপকরণ প্রদান করে যা ব্যবহারকারীরা অনুমানে ব্যবহার করতে পারেন এবং সেবা পরিচালনা করতে পারেন। ব্যবহারকারীরা এই ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার উপকরণের মধ্যে অন্যান্য সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করতে পারেন এবং তাদের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে যে কোনও সময়ে রিসোর্স স্কেল করতে পারেন।
IaaS এর একটি উদাহরণ হলো Amazon Web Services (AWS) EC2, Microsoft Azure Virtual Machines, Google Compute Engine ইত্যাদি। এই প্রদানকারী প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহারকারীদের জন্য ভার্চুয়াল মেশিন, স্টোরেজ স্পেস, নেটওয়ার্কিং রিসোর্স এবং অন্যান্য ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার সেবা প্রদান করে, যা তারা ব্যবহার করতে পারে এবং যা ব্যবহারকারীরা প্রয়োজনীয় হিসাবে প্রস্তুত করতে পারে।
PaaS
PaaS হল “Platform as a Service” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি একটি ক্লাউড কম্পিউটিং মডেল যেখানে সেবা প্রদানকারী একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে, যা ব্যবহারকারীদের অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, পরিচালনা এবং হোস্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
PaaS সেবাগুলি অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট, ওয়েব সার্ভিং, ম্যাইক্রোসার্ভিস, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হোস্টিং, এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম সেবা সরবরাহ করে। প্রযুক্তি ব্যবহারকারীরা এই প্ল্যাটফর্ম সেবা ব্যবহার করে নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং পরিচালনা করতে পারেন বিনামূল্যে বা পেশাদার দরে।
PaaS এর একটি উদাহরণ হলো Microsoft Azure App Service, Google App Engine, AWS Elastic Beanstalk, Heroku ইত্যাদি। এই সেবাগুলি ডেভেলপারদের এবং সংস্থাগুলির জন্য সহজে ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে এবং তাদের অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগুলি সরবরাহ করে।
SaaS
SaaS হল “Software as a Service” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি একটি ক্লাউড কম্পিউটিং মডেল যেখানে সেবা প্রদানকারী সফ্টওয়্যার এবং এপ্লিকেশন প্রদান করে এবং ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা ব্যবহার করার অনুমতি দেয়।
SaaS সেবাগুলি ব্যবহারকারীদের অনুমতি দেয় প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যার এবং এপ্লিকেশন ফ্রীতে বা পেইডে ব্যবহার করতে দেয়। ব্যবহারকারীর এই সেবাগুলি লোকালভাবে ইনস্টল করার প্রয়োজন নেই এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা সফটওয়্যার ম্যানেজ করার জন্য চিন্তা করতে হয় না।
SaaS এর উদাহরণ হলো Google Workspace (গুগল ডক, শিট), Microsoft 365, Dropbox, Salesforce ইত্যাদি। এই সেবাগুলি প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যার এবং এপ্লিকেশন ব্যবহার করার জন্য অ্যাক্সেস প্রদান করে।
ক্লাউড কম্পিউটিং বেশ সহজ ও শক্তিশালী একটি পদ্ধতি যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে রিসোর্স প্রদান করে। এটি যেভাবে কাজ করে তা হলো:
সংগ্রহ প্রদানকারী সার্ভার: ক্লাউড প্রদানকারী বিভিন্ন ধরণের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সার্ভার প্রদান করে, যা ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করতে পারেন। এই সার্ভারগুলি প্রধানত ডেটা স্টোর করার জন্য ব্যবহার হয়।
সফটওয়্যার সেবা: ক্লাউড সেবা প্রদানকারীরা বিভিন্ন সফটওয়্যার সেবা প্রদান করেন, যেমন ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিট, ডাটাবেস পরিচালনা, ইমেইল সেবা, গেমিং ইত্যাদি।
নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্ট্রাকচার: ক্লাউড প্রদানকারীরা ব্যবহারকারীদের জন্য নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রদান করেন, যা সার্ভারের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে এবং অনলাইন কমিউনিকেশনে সুবিধা প্রদান করে।
অন-ডিমান্ড সেবা প্রদান: ক্লাউড প্রদানকারীরা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ধরণের সেবা প্রদান করে যেমন; স্টোরেজ, কম্পিউটিং সার্ভিস, নেটওয়ার্কিং সেবা ইত্যাদি যা ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী সম্পূর্ণ করে।
সার্ভার, স্টোরেজ, নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও সফটওয়্যার সেবার সংমিশ্রণের মাধ্যমে, ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহারকারীদের জন্য সহজবোধ্য, সহজলভ্য এবং স্কেলযোগ্য সেবা প্রদান করে। যে কোন সময় ক্লাউড সেবা ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী সহজে বাড়ানো বা কমানো যায়।
সুবিধা:
স্কেলিং এবং ফ্লেক্সিবিলিটি: ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম স্কেল এবং ফ্লেক্সিবিলিটি প্রদান করে, যাতে ব্যবহারকারীরা প্রয়োজন মতো রিসোর্স ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারকারীদের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে, যা প্রথমতঃ অধিক সার্ভারের প্রয়োজন হলে বৃদ্ধি করে এবং পরবর্তীতে কমানো হলে হ্রাস করে।
গ্লোবাল অ্যাক্সেস: ক্লাউড প্রযুক্তি দ্বারা ব্যবহারকারীরা যে জায়গায় থাকুক না কেন, তারা ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করতে পারবে। এটি ব্যবহারকারীদের বিশ্বের সব অংশে সহজে সার্ভার, ডেটা এবং অ্যাপ্লিকেশনের সাথে যুক্ত হতে সাহায্য করে।
কম খরচ: ক্লাউড সেবাগুলি ব্যবহারকারীদের মাত্র ব্যবহার অনুসারে মূল্য নির্ধারণ করে, যা খুবই প্রয়োজনীয়। সার্ভার অথবা অন্যান্য হার্ডওয়্যার ক্রয় করতে হয় না এবং ব্যবহারকারীরা মাত্র তাদের ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্স ব্যবহার করতে পারে।
স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা: ক্লাউড প্ল্যাটফর্মগুলি সার্ভিস প্রদানে প্রায় সার্ভারের অত্যন্ত স্থিতিশীলতা এবং উচ্চ বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে। এই প্ল্যাটফর্মগুলি স্থানীয় সার্ভার ব্যবহার করা থেকে অধিক বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে।
অসুবিধা:
ইন্টারনেট সংযোগের অস্থায়ীতা: ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহারের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় ইন্টারনেট সংযোগের অস্থায়ীতা ক্লাউড সেবাগুলি ব্যবহারে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি: ক্লাউড সার্ভারে ডেটা স্টোরেজ করা হয়, যা সাইবার হ্যাকারদের লক্ষ্য হতে পারে। যদি সাইবার নিরাপত্তা সমস্যা হয়, তবে গোপন ডেটা সহজেই অন্যান্য লোকের হাতে পৌঁছে যেতে পারে।
ডেটা মাইগ্রেশন: কিছু ক্লাউড প্রদানকারী ফুল নিয়ন্ত্রণ দেয় না যার কারণে ব্যবহারকারীরা ফুল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না বা ডেটা স্থানান্তরিত করতে পারেন না।
সামগ্রিকভাবে, ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কর্মক্ষম প্রযুক্তি, যা সম্প্রতি ব্যবহারকারীদের মধ্যে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তবে, এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন সচেতন ও সিকিউরিটি ব্যবস্থাপনা ।