ফ্রিল্যান্সিং হল কাজ করার একটি পরিসর মাত্র। কোন প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে চুক্তিবদ্ধ না হয়ে অথবা তত্বাবদায়নে না থেকে ইন্টারনেট মাধ্যমে সরাসরি কোন একক উদ্দ্যোক্তার বা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রজেক্ট নির্দিষ্ট সময় বা চুক্তির দ্বারা সম্পন্ন করাই হলো ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং। শত বছরের বেশি সময় ধরে মানুষ বিভিন্ন কাজ ফ্রিল্যান্সিং করে আসছে। উদাহরন স্বরুপ একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা পরিবেশে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে বা চুক্তি সাপেক্ষে ছবি তোলেন, এইক্ষেত্রে তার কাজটি স্থায়ী নয় বা কাজ শেষে অন্য কোথাও কাজ নিতে পারেন স্বাধীনভাবে,যা ফ্রিল্যান্সিং এর আওতায় পরে। কিন্তু অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে কোন নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটের মাধ্যমে (অনলাইন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) একজন বায়ার (ক্রেতা) ও একজন সেলারকে (বিক্রেতা) তার কিছু কাজ সম্পন্ন করার জন্য আহ্বান জানাবে এবং একটি নির্ধারিত পারিশ্রমিক শর্তে কাজে চুক্তিবদ্ধ হবেন। সেলার নিজের কর্মদক্ষতা দিয়ে কাজ শেষ করে অনলাইনের মাধ্যমেই বায়ারকে ডেলিভার (হস্তান্তর) করবেন, পরিশেষে অনলাইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বায়ার সেলারকে পেমেন্ট (পারিশ্রমিক বা সন্মানি প্রদান) করবেন।
ক্যারিয়ার শুরুর প্রাথমিক ধাপই হলো ফ্রিল্যান্সিং এবং এই ধাপে আপনাকে অনেক অনেক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতেই হবে যা কোন বিকল্প কিছুই নেই। এক্ষেত্রে যদি সহজতর দক্ষতাগুলোর তালিকা তৈরি করা যায় (নিচে উল্লেখ করা হলো) তা দিয়ে শুরু আপনি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। ক্যারিয়ার তৈরির এক পর্যায়ে আপনি আরও অ্যাডভান্স লেভেলের দক্ষতাগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন।
কোন নির্দিষ্ট বিষয়, কোন ব্যক্তি বা বস্তু অথবা স্থান সম্পর্কে গুছিয়ে কনটেন্ট লেখাই হলো আর্টিক্যল রাইটিং। আর্টিক্যল রাইটিং এ দ্বিতীয় বা তৃতীয় ব্যক্তির অবস্থান থেকে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপাত্ত দিয়ে সার্বজনীন গৃহীত তত্ত্ব ও তথ্যের সমান্নয়ে উপাস্থাপন করা হয়। যা ৩০০ থেকে ১,০০০ এর উপরে শব্দ দিয়ে সাজানো হয়। অন্যদিকে ব্লগ পোষ্ট হলো ব্যক্তি নিজ অবস্থান থেকে নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোন কনটেন্ট উপাস্থাপন করা, যাতে সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত থাকে। ব্লগ পোষ্ট সাধারনত ৩০০ থেকে ১,০০০ শব্দের মধ্যেই সাজানো হয়ে থাকে। চাহিদা অনুযায়ী আপনি নিজের জন্য আর্টিক্যল রাইটিং বা ব্লগ পোষ্ট লিখে অথবা ফ্রিল্যান্স করে সফল হতে পারবেন।
টেক দুনিয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো ইন্টারনেট জগৎ। কি নেই যা আপনার হাতের নাগালে নেই। ডিজিটাল প্রোডাক্ট তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো আপনার কম্পিউটার অথবা স্মার্টফোন, এছাড়াও বিভিন্ন গ্যাজেটস তো আছেই। আপনি অনায়াসে অডিও মিডিয়া বা পডকাস্ট, ডিভিও মিডিয়া বা ভিডিও টিউটোরিয়াল কিংবা ভিডিও ব্লগ, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফন্ট ডিজাইন, ইবুক অথবা ডকুমেন্ট বানাতে পারবেন। এই ডিজিটাল প্রোডক্টগুলো অনলাইনে বা ইকমার্স সাইটের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবেন।
স্যোসাল মিডিয়া মার্কেটিং বা এসএমএম হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। বিগত ১৮ বছরে সারা বিশ্বের ৮০% মানুষ স্যোসাল মিডিয়া মার্কেটিং এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আসছে, হোক সেটা ফেসবুক, টুইটার বা অন্যান্য পরিচিত সব স্যোসাল মিডিয়াগুলো। একবিংশ শতাব্দীতে স্যোসাল মিডিয়া ব্যবহারকারী প্রত্যেকটা ব্যক্তিই হলো প্রোডাক্ট। কম বেশি সব কোম্পানীর প্রোডাক্ট ইনফরমেশন ডিটেইলস স্যোসাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে হাইলাইট করছে। যেহেতু ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি ক্ষুদ্র অংশ হলো স্যোসাল মিডিয়া মার্কেটিং, সেহেতু স্যোসাল মিডিয়াতে আরোও উজ্জ্বল ভবিষ্যত বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কয়েকগুন বেশি।
বর্তমানে UX & UI ডিজাইন এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সাধারনত UX ডিজাইন বলতে ইউজার এক্সপেরিয়েন্সকে বুঝায়। মূলত, ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল প্রোডাক্ট ডিজাইন এর প্রথম অভিজ্ঞতা যা গঠনগতভাবে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করার পূর্বের অবস্থা বা ডেমো অথবা প্রোটটাইপ ভার্সন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ডিজাইনটি কতটুকু সহজভাবে ব্যবহার উপযোগী, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বা আদ্যোপান্ত অভিজ্ঞতা এবং কতটুকু সে সাবলীলতায় কাজ সম্পন্ন করতে পারছে। অপরদিকে UI ডিজাইন বলতে ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন যা ডিজিটাল প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। UI ডিজাইন মূলত ব্যবহারকারীর অনুভূতি বা আমরা যাকে ইউজার ফ্রেন্ডলী বলে থাকি। অর্থাৎ UX ডিজাইন যেখান থেকে শেষ ঠিক সেখান থেকে UI ডিজাইন এর হাতেখরি। ব্যবহারকারীর অনুভূতির পুরোটাই নির্ভর করে UI ডিজাইন, যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় যে ডিজিটাল প্রোডাক্টটি কতটা ব্যবহার উপযোগী। UX & UI ডিজাইন ছাড়া কোন প্রোডাক্ট এর কথা আজ আর ভাবায় যায় না। তাই এখানেও একটা বিশাল ভবিষ্যত উম্মোচিত হয়ে আছে।
ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট হল অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম তৈরি করা, যা দূরবর্তী সার্ভারে রেখে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ডিভাইসে বিতরণ করা হয়। ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করার প্রয়োজন নেই এবং পরিবর্তে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা হয়। একজন ব্যবহারকারী ওয়েব ব্রাউজার, যেমন – মজিলা ফায়ারফক্স বা গুগল ক্রোমর মাধ্যমে একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্সেস করতে পারেন। ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট এ সাধারণত একটি ছোট ডেভেলপমেন্ট টিম দ্বারা পরিচালিত হয়। ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট ক্লায়েন্ট সাইড প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট মূলত একটি কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, যেমন একটি ওয়েব ব্রাউজারকে বোঝায়। ক্লায়েন্ট সাইড প্রোগ্রামিং সাধারণত HTML, CSS এবং JavaScript ব্যবহার করে থাকে। ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে প্রচুর পরিমাণে তথ্য থাকে, যাতে অনেক ভুল থাকতেই পারে। তাই অন্যান্য সফটওয়্যারগুলোর তুলনায় ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য পরীক্ষার নিরিক্ষারা প্রক্রিয়া আরও গভীরভাবে হতে থাকে। ফলসূত্রিতে আগামী দিনগুলোতে ওয়েব অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর চাহিদা ব্যপক হারে বাড়তে থাকবে।
বর্তমানে এই কাজ গুলোর চাহিদা অত্যাধিক, তাই হাত গুটিয়ে বসে না থেকে আর মাথা চুলকিয়ে “কি করবো?” চিন্তা বাদ দিয়ে এক্ষুনি কাজে উঠেপড়ে লেগে থাকুন আঁঠার মতো। এতে আপনার স্কিল আরোও ডেভেলপড হবে আর ডিমান্ড বাড়বে, ধন্যবাদ।